SATT ACADEMY

New to Satt Academy? Create an account


or

Log in with Google Account

নবম-দশম শ্রেণি (দাখিল) - গার্হস্থ্য বিজ্ঞান - শিশুর বর্ধন ও বিকাশ | NCTB BOOK

আমরা জানি, বিকাশ ধারাবাহিকভাবে চলে। এটা কখনো থেমে থাকে না। জীবনের প্রতিটি স্তরে বিকাশ সম্পর্কে সমাজের নির্দিষ্ট প্রত্যাশা থাকে। একজন প্রাপ্তবয়স্ক সম্পর্কে সমাজের প্রত্যাশা এমন থাকে যে সে উপার্জন করবে, পরিবার ও সমাজের বিভিন্ন দায়িত্ব গ্রহণ করবে। যে ব্যক্তি প্রাপ্তবয়সেও পিতামাতার উপর নির্ভরশীল থাকে সে সঠিকভাবে সমাজের প্রত্যাশা অনুযায়ী কার্যক্রম পালন করতে পারছে না ধরে নেওয়া হয়। জীবনের প্রতিটি স্তরে যে নির্দিষ্ট কাজ সামনে আসে তা সফলভাবে করতে পারলে জীবন হয় সুখের এবং পরবর্তী স্তরের কাজও সফলভাবে সম্পন্ন করা যায়। অপর দিকে এ কাজের ব্যর্থতা জীবনে আনে অশান্তি এবং পরবর্তী স্তরের সফলতায় বাধা সৃষ্টি করে। বিকাশের বিভিন্ন স্তরে সামাজিক প্রত্যাশা অনুযায়ী কাজকেই বিকাশমূলক কার্যক্রম বলা হয়। অর্থাৎ বিকাশমূলক কার্যক্রম হলো-

 

  • জীবনের নির্দিষ্ট স্তরে করণীয় কিছু কাজ যা সমাজ প্রত্যাশা করে।
  • এ কাজের সফলতা পরবর্তী স্তরে সফল উত্তরণে সহায়তা করে, জীবনকে করে সুখী।
  •  এ কাজের ব্যর্থতা পরবর্তী স্তরের উত্তরণে আনে বাধা, জীবনে আনে অশান্তি ।

 

বিকাশমূলক কাজগুলো হলো-

 

  • বিকাশমূলক কাজের মধ্যে থাকে শারীরিক পরিপক্বতা অনুযায়ী কাজ যেমন- হাঁটতে শেখা, কথা বলতে শেখা, খেলাধূলায় দক্ষতা ইত্যাদি।

 

  • সমাজ সংস্কৃতি অনুযায়ী কাজ যেমন- লেখাপড়া করা, সুনাগরিক হিসেবে নিজেকে গড়ে তোলা, নিয়ম মেনে চলা ইত্যাদি।

 

  •  নিজের আগ্রহ, মূল্যবোধ অনুযায়ী কাজ যেমন- পেশা নির্বাচনে নিজস্ব প্রত্যাশা, নিজের আগ্রহ, মূল্যবোধ ব্যক্তির ব্যক্তিত্বের একটি অংশ।

 

বিকাশমূলক কার্যক্রম সম্পর্কে আমাদের ধারণা থাকলে যে সুবিধাগুলো হয় তা হলো-

 

  • বিকাশমূলক কার্যক্রম জানলে বয়স অনুযায়ী সঠিক আচরণ করা সহজ হয়।
  • বাবা-মা বা শিশুর পরিচালনাকারী বয়সানুযায়ী শিশুর স্বাভাবিক বিকাশ জানতে পারেন এবং সেভাবে শিশুর সামাজিক দক্ষতা অর্জনে সহায়তা করতে পারেন।
  • বিকাশমূলক কার্যক্রম সামাজিক প্রত্যাশা অনুযায়ী আচরণ করতে পূর্বপ্রস্তুতি ও প্রেরণা দেয়। এতে বিকাশের প্রতি স্তরে খাপ খাওয়ানো সহজ হয়

 

অতি শৈশব ও প্রারম্ভিক শৈশবের কয়েকটি বিকাশমূলক কাজ -

 

  • হাঁটতে শেখা১২ থেকে ১৫ মাসের মধ্যে শিশু হাঁটতে পারার শারীরিক যোগ্যতা অর্জন করে।
  • শক্ত খাদ্য গ্রহণ করতে শেখা দুই বছর বয়সের মধ্যে শিশু শক্ত খাদ্য চোষা ও চিবানোর ক্ষমতা অর্জন করে।
  • কথা বলতে শেখা শিশু ৬ মাসের মধ্যে অর্থহীন শব্দ করে। ৩ বছরে দুই বা তিন শব্দের বাক্য বলে। ৫ বছরের মধ্যে বহু শব্দের ব্যবহারে পূর্ণ বাক্য বলে ।
  • মলমূত্র ত্যাগের নিয়ন্ত্রণ শেখা- দুই বছরের মধ্যে মল-মূত্র ত্যাগের স্থান ও সময় নির্দিষ্ট হয়। এর
  • নিয়ন্ত্রণে প্রশিক্ষণেরও প্রয়োজন হয়।
  • শরীরবৃত্তীয় দক্ষতা অর্জন পাঁচ বছরের মধ্যে দেহের তাপ, বিপাক ক্রিয়ায় ভারসাম্য এবং শারীরিক গঠনে দৃঢ়তা আসে যার কারণে অল্পতেই অসুস্থ হওয়ার আশঙ্কা কমে যায়।
  • সঠিক ও ভুলের পার্থক্য করতে শেখা- শৈশবের প্রথম দিকে বাবা-মা যে কাজকে পুরস্কৃত করেন বা ভালো বলেন- সেটাই ভালো কাজ এবং যে কাজ করতে নিষেধ করেন সেটা খারাপ কাজ, এভাবে ভালো মন্দের ধারণা তৈরি হয়।

মধ্য শৈশবের কয়েকটি বিকাশমূলক কাজ

 

  • সমবয়সীদের সাথে সঠিক আচরণ করতে শেখা এই বয়সকে দলীয় বয়স বলা হয়। সমবয়সী দলে মিশে তারা সামাজিক আদান-প্রদান, ভালো কাজে প্রতিযোগিতা করা ইত্যাদি শেখে ।
  • সাধারণ খেলাধুলার প্রয়োজনীয় শারীরিক দক্ষতা শেখা- সঠিকভাবে কোনো কিছু ছোড়া, ধরতে পারা, বলসঠিকভাবে লাথি মারা ইত্যাদি কৌশলগুলো শেখার শারীরিক যোগ্যতা অর্জন করে। ছেলে ও মেয়ে অনুযায়ী সামাজিক ভূমিকা শেখা ছেলে বাবার ভূমিকা এবং মেয়ে মায়ের ভূমিকা অনুকরণ থেকেই লিঙ্গ অনুযায়ী ভূমিকা শেখে ।
  • পড়ালেখা ও গণনার মূল কৌশল আয়ত্ত করা ৬ বছরের পরে স্নায়ু, আঙ্গুলের পেশি, বাহু লেখার উপযোগী হয়। দৈহিক যোগ্যতা অর্জনের পর বয়ঃবৃদ্ধির সাথে সাথে শিশুর পড়া ও লেখার দক্ষতা বৃদ্ধি পায়।
  • দৈনন্দিন জীবনে প্রয়োজনীয় বস্তু সম্পর্কে ধারণার বিকাশ- স্কুলে যাওয়ার পর থেকে শিশু বহু বিষয় সম্পর্কে ধারণা পায়। যেমন- সময় (ঘণ্টা, মিনিটি, সেকেন্ড –এর ধারণা), দুরত্ব (বাড়ি থেকে স্কুল, ঢাকা থেকে চিটাগং এর দুরত্ব), ওজন (তুলা হালকা, লোহা ভারী) ইত্যাদি বিষয়গুলো বুঝতে পারে। এই ধারণাগুলো থেকেই তাদের চিন্তা করার সূত্রপাত ঘটে।

 

বয়ঃসন্ধি বা কৈশোরের বিকাশমূলক কাজ

 

  • উভয় লিঙ্গের সমবয়সীদের সাথে পরিণত আচরণ করতে পারা ।
  • বাবা-মা ও অন্যের উপর থেকে আবেগীয় নির্ভরশীলতা কমানো শৈশবের নির্ভরশীলতা বয়ঃসন্ধিকাল থেকেই কমতে থাকে। তারা আত্মনির্ভরশীল হয়। অনেক সময় বাবা-মায়ের স্নেহ –ভালোবাসাকে তারা বাড়াবাড়ি মনে করে। তাদের মধ্যে স্বাধীনতার চাহিদা থাকে।
  • বৃত্তি নির্বাচন ও পেশার জন্য প্রস্তুতি- শৈশবে পেশা সম্পর্কিত পরিকল্পনা থাকে অস্পষ্ট অবাস্তব। কৈশোরে নিজের যোগ্যতা ও দক্ষতার আলোকে পেশার প্রতি আগ্রহ তৈরি হয় বলে তা হয় বাস্তবধর্মী।

 

  • সামাজিকভাবে দায়িত্বপূর্ণ আচরণ গ্রহণের আগ্রহ- নিজ আচরণের মাধ্যমে সমাজ ও রাষ্ট্রীয় কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণের আগ্রহ এ সময়ের অন্যতম প্রধান বিকাশমূলক কাজ। তারা সমাজের ভালোর জন্য সংঘবদ্ধ হয়ে কাজ করতে উৎসাহী হয়।
  • নৈতিকতা অর্জন এ সময়ের মধ্যে ছেলেমেয়েদের ভালো-মন্দ, ন্যায়-অন্যায়ের নিজস্ব ধারণা তৈরি হয়। এর আগে তাদের মধ্যে মা-বাবার শাস্তি ও পুরস্কারের উপর ভিত্তি করে ভুল ও সঠিক বিষয়টি নির্ভর করত।

কাজ – মধ্য শৈশব ও কৈশোরের বিকাশমূলক কাজ কোন গুলো পৃথকভাবে তালিকা কর ।

Content added By